মার্চেন্ডাইজিং কি
মার্চেন্ডাইজ (Merchandise) একটি ইংরেজি শব্দ। এই মার্চেন্ডাইজ শব্দ থেকে এসেছে মার্চেন্ডাইজিং (Merchandising) এর আভিধানিক অর্থ পণ্য কেনা বেচা করা। অর্থাৎ আয়ের উদ্দেশ্যে কোন পণ্য কিনে তা আবার বিক্রি করাকে মার্চেন্ডাইজিং বলে।
গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজিং
গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজিং এর অর্থ হল গার্মেন্টসে পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন কাপড়, এক্সোসরিজ ইত্যাদি কেনা এবং তা দিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করে সেই প্রোডাক্ট বিক্রি করা। উদ্দেশ্য থাকবে প্রোডাক্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়, এক্সোসরিজ ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার খরচ, গার্মেন্টস বা পোশাক তৈরির জন্য নিয়োজিত শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরী, বেতন, ফ্যাক্টরি ভাড়া, ইত্যাদি যাবতীয় মোট খরচের চাইতে গার্মেন্টস বা পোশাকের বিক্রয় মূল্য যেন বেশী হয়।
গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজার
মার্চেন্ডাইজিং এর সংজ্ঞা থেকে অনুমান করা যায় যে, এ কাজটি সম্পাদনের জন্য গার্মেন্টস ফ্যক্টরিতে কিংবা বায়িং হাউসে সুনির্দিষ্ট লোক থাকা প্রয়োজন। যে ব্যক্তি গার্মেন্টস ফ্যক্টরি কিংবা বায়িং হাউসে মার্চেন্ডাইজিং এর যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেন তাকে গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজার বলে।
একজন মার্চেন্ডাইজারকে যা করতে হয়
একজন মার্চেন্ডাইজার বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়ার কাজটা করে থাকেন। অর্ডার অনুযায়ী পোশাক তৈরি, মান নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি করণের কাজও তাকে সম্পাদন করতে হয়। কেননা তিনিই নিশ্চিত করে থাকেন বায়ার বা বিদেশি ক্রেতার চাহিদা মতো মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি হয়েছে কি না? বায়ার অর্থাৎ বিদেশি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কোন নির্দিষ্ট পোশাকের কয়েকটি স্যাম্পল তৈরি করে প্রথমে বায়ারকে দেখাতে হয়। বায়ারের কোনো একটি স্যাম্পল পছন্দ হলে এর প্রাইস অফার করেন মার্চেন্ডাইজার। প্রাইস অ্যাকসেপ্ট হলে চাহিদা অনুযায়ী কাপড় ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি সংগ্রহ পূর্বক নির্দিষ্ট পরিমান পোশাক তৈরি করে বায়ারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাহাজিকরণ করাই একজন মার্চেন্ডাইজারের কাজ। এক কথায় সামগ্রিক গার্মেন্টস ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক একজন মার্চেন্ডাইজার।
ক্যারিয়ার গঠনে মার্চেন্ডাইজিং-এর ভূমিকা
শ্রমের মূল্য কম হওয়ায় আমাদের দেশে ৮০এর দশকে শুরু হওয়া তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে বিশ্ব বাজারে রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ হবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম এই শিল্পের বিপুল চাহিদার কারণে অন্য সব পেশার চেয়ে এ পেশায় চাকরি পাওয়া অত্যন্ত সহজ। কাজের ক্ষেত্র বিশাল, ১৭ কোটি লোকের দেশে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ তাই সহজেই মেলে চাকরি। আছে ভাল বেতন, বিদেশ ভ্রমণ সহ নানা সুযোগ সুবিধা। তাই নানা কারণেই ক্যারিয়ার গঠনে মার্চেন্ডাইজিং অনেকেরই প্রথম পছন্দ। দেশিয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের মোট জাতীয় রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই (৮০%) আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। বর্তমানে অনেক তরুণ তরুণী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রফেশনাল কোর্স করছে। ক্যারিয়ার গঠনে তেমনই একটি ফলপ্রসু কোর্স মার্চেন্ডাইজিং। এ পেশায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বিস্তৃত।
কাজের সুযোগ
বর্তমানে দেশি বিদেশি সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বায়িং হাউসের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আর বিজিএমই-এর সদস্যভুক্ত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। এ ছাড়াও রয়েছে টেক্সটাইল ইন্ডাসট্রিস, কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাশন ডিজাইন হাউজ। প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বায়িং হাউস ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে দক্ষ মার্চেন্ডাইজারের চাহিদা ও মার্চেন্ডাইজারের পেশাগত সুযোগ সুবিধা । তাই ক্যারিয়ার হিসেবে মার্চেন্ডাইজিংকে বেছে নিতে হলে প্রস্তুতি নিতে হবে ভালোভাবে। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ উনমুক্ত তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দরকার প্রফেশনাল কোর্স। বিবিএ, এমবিএ, অনার্স কিংবা গ্রাজুয়েশন করার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদের কোর্স করে আপনিও গড়তে পারেন স্বপ্নের ভবিষ্যত। তাই যদি তৈরি পোশাক শিল্পে চাকুরি অথবা ব্যবসায়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন টেকনোলজি (বি,আই,এফ,ডি,টি) - এর অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং কোর্সটি করুন।
বেতন কাঠামো ও পদোন্নতি
তৈরি পোশাক খাত একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতে যেমন আছে ব্যাপক কাজের সুযোগ, তেমনি আছে সম্মানজনক আয়েরও সুযোগ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে একজন অনভিজ্ঞ মার্চেন্ডাইজার প্রথম কর্ম জীবনে প্রতিষ্ঠান ভেদে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। তবে অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে আছে অনেকদূর পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ। এই পেশায় আসার তিন থেকে পাঁচ বছরের মাথায় একজন মার্চেন্ডাইজারের বেতন লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া বিদেশি ব্রান্ডগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যেসব মার্চেন্ডাইজাররা কাজ করেন, তাদের বেতন আর বেশি হয়ে থাকে।
পদোন্নতি
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে সাধারণত চাকরির শুরুতে অ্যাসিস্টেন্ট মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়। কাজের দক্ষতা এবং ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে অল্পদিনের মধ্যেই একজন অ্যাসিস্টেন্ট মার্চেন্ডাইজার পদোন্নতি পেয়ে মার্চেন্ডাইজার হয়ে যান। পরবর্তীতে তারা সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার, মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার এবং আরও বড় পদে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। বায়ারদের সঙ্গে কথা বলে যে যত সহজে কাজটি আদায় করতে পারে, তার ওপর নির্ভর করে এ পেশার পদোন্নতি। শুধুই কি চাকরি, একজন মার্চেন্ডাইজার কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা এবং কর্ম জীবনের অর্জিত অর্থের ভিত্তিতে এক পর্যায়ে নিজেই শুরু করতে পারেন বায়িং হাউজ বা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি । এমন অনেক বাস্তব উদাহরণ রয়েছে বাংলাদেশে। (কথা গুলোর সত্যতা যাচাই করুন তাদের কাছ থেকে, যারা বর্তমানে এই সেক্টরে কর্মরত আছে। )
কী শিখবেন, কেন শিখবেন
চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীর চাহিদা বেশি হয়ে থাকে। তার উপর পেশাক শিল্পের এ পেশাটি সম্পূর্ণ বাস্তব কাজের উপর নির্ভরশীল। তাই এই খাতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন টেকনোলজি (বি,আই,এফ,ডি,টি)-এর এসব প্রশিক্ষণে গার্মেন্ট, বায়িং হাউজ ও মার্চেন্ডাইজিং পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই শেখানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট, বায়িং পলিসি, ইন্ডেন্টিং, ব্যাংকিং, কাস্টমস, ইপিবি, শিপিং, এলসি ডকুমেন্টেশন, কনজামশন, কস্টিং, করসপন্ডেন্স, জিএসপি, কোটা, টোটাল গার্মেন্টস প্রোডাকশন প্রসিডিউর(ওভেন, নিট, স্যুয়েটার), পেটার্ন মেকিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ফেব্রিকস ইন্সপেকসন, অ্যাকসেসরিজ, টেক্সটাইল টেকনোলজি, ল্যাব টেস্ট, মার্চেন্ডাইজিং টাইম এন্ড অ্যাকশন প্লানিং, প্রোডাকশন প্লানিং, মার্কেটিং, ইমেইল, ইন্টারনেট এবং আনুষঙ্গিক আর অন্যান্য বিষয়। মার্চেন্ডাইজিং-এ দক্ষ জনবলের অভাব এখনো আছে এ দেশে। ফলে এ পেশায় কাজের সুযোগ অনেক বেশি।
মেয়েদের কাজের ক্ষেত্র
এ সেক্টরে দিন দিন মেয়েদের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় পাওয়া যাচ্ছে না দক্ষ মেয়ে মার্চেন্ডাইজার। ক্ষেত্রভেদে ছেলেদের তুলনায় এ সেক্টরে মেয়েদের সফলতার হার বেশি। সাধারণত মেয়ে মার্চেন্ডাইজারা মার্চেন্ডাইজিং বিভাগের কর্মাশিয়াল শাখায় কর্মাশিয়াল অফিসার হিসেবে মূলত আমদানি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং-এর কাজগুলো করেন যা ব্যাংক লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ায় সাধারণ অফিস সময় (৯টা থেকে ৫টা) এর মধ্যে তাদের কাজ শেষ হয়ে থাকে। ফলে বর্তমানে মেয়েরাও অন্যান্য চাকরির ন্যায় মার্চেন্ডাইজিংকে পেশা হিসেবে গ্রহন করে সফলতা অর্জন করছে।
যোগ্যতা
এইচএসসি-এর পর বিবিএ, এমবিএ, অনার্স কিংবা গ্রাজুয়েশন করার পাশাপাশি যে কোন বয়সের শিক্ষার্থীরা এসব কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ইংরেজিতে পারদর্শিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা বলতে হয় এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা দিতে হয়। একই সঙ্গে কম্পিউটার জানাটাও আবশ্যক। কারণ বায়ারদের সঙ্গে ইমেলে যোগাযোগ করতে হয়, কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আপডেট দিতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন টেকনোলজি (বি,আই,এফ,ডি,টি)-তে রয়েছে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং -এর ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। উভয় কোর্সে স্পোকেন ইংলিশ ও কম্পিউটার ট্রেনিং বাধ্যতা মূলক যার ফলে স্টুডেন্টের ব্যাকগ্রাউন্ড যেমনই হোক না কেন সে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলে বায়ারদের সঙ্গে কমিউনিকেশন করে অর্ডার সংগ্রহ পূর্বক গুনগত মানের পন্য উৎপাদন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাহাজিকরণ করে হতে পারেন একজন সফল মার্চেন্ডাইজার।